সুরমা ইউনিয়ন পরিষদ : চেয়ারম্যানের দেখা নেই, সেবাবঞ্চিত জনগণ
- আপলোড সময় : ২৩-০৯-২০২৪ ০১:১৯:১২ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ২৩-০৯-২০২৪ ০১:১৯:১২ পূর্বাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার ::
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন রেজার নানা অনিয়মে অতিষ্ঠ হয়ে পরিষদের সদস্যরা অনাস্থাদানের পরও ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তার বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে আবারও দাবি জানিয়েছেন পরিষদের সদস্যরা। উন্নয়ন বৈষম্যের শিকার পরিষদের সদস্যরা ইউনিয়নের বরাদ্দ যথাযথভাবে ব্যবহারের উদ্যোগ নিতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
এছাড়াও কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার কারণে জনগণ সেবা পাচ্ছেনা বলেও মন্তব্য করে তারা চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবি করেছেন। এই দাবিতে তারা সম্প্রতি লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন।
ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন রেজার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনে লিখিত অনাস্থা আবেদন, দুর্নীতি ও অনিয়মের আবেদন পর্যালোচনা করে এবং ইউপি সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানাযায়, এখনো ইউনিয়নবাসীর সঙ্গে বরাদ্দ বণ্টনের ক্ষেত্রে বৈষম্য করছেন ইউপি চেয়ারম্যান আমির হোসেন রেজা। গত ১৯ সেপ্টেম্বর সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পরিষদের ৯ জন ইউপি সদস্য লিখিত অভিযোগ করেন। ওই অভিযোগে তারা উল্লেখ করেন, আমির হোসেন রেজা গত ১০ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পরিষদে অনুপস্থিত রয়েছেন। বর্তমানে তিনি আত্মগোপনে থাকায় পরিষদের কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। সেবাবঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ নাগরিকরা। নিয়মিত তিনি অনুপস্থিত থাকলেও সরকারের সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে কোনও ছুটি নিচ্ছেন না। মনগড়া অফিসে যাতায়াত করেন। ওই অভিযোগে ইউপি সদস্যরা উল্লেখ করেন গত ১০ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সরকার শাখায় ৫৮৯ নং স্মারকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সহকারী কমিশনারকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তার জিআর ৪৭/২-২৪ মামলায় আদালত কর্তৃক অভিযোগপত্র (নং ৮৭) বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন মামলা ও অভিযোগ থাকায় তিনি আওয়ামী লীগ নেতা এই ইউপি চেয়ারম্যান আত্মগোপনে আছেন। তাই এই অবস্থায় ইউপি চেয়ারম্যানকে অপসারণ করে পরিষদের স্বাভাবিক কার্যক্রম সচল রাখার লিখিত আহ্বান জানান ৯ জন ইউপি সদস্য।
অভিযোগকারীরা জানান, নির্বাচিত ইউপি সদস্যদের পাশ কাটিয়ে যাচ্ছেতাইভাবে বরাদ্দ বণ্টনসহ নিজের পছন্দের লোকদের দিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছেন। বিভিন্ন সময়ে ভুয়া প্রকল্প দিয়েও বরাদ্দ নয়ছয় করছেন। এতে বঞ্চিত হচ্ছে ইউনিয়নবাসী। চেয়ারম্যানের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে তোপের মুখে পড়ছেন পরিষদের সদস্যরা।
২০২২ সালের ৫ জুন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর দেওয়া আবেদনে ইউপি সদস্যরা উল্লেখ করেন, নির্বাচিত ইউপি সদস্যদের সঙ্গে সমন্বয় না করে ইউনিয়নের সকল প্রকল্পে নিজেই কাজ করছেন। কাবিখা, কাবিটা, এলজিএসপি-২ এর বরাদ্দ ৪ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকাসহ বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা ইউপি সদস্যদের না জানিয়ে নিজের ইচ্ছেমতো ব্যবহার করেছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করেন সদস্যরা। এর আগে ২০২২ সালের ১২ ডিসেম্বর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে আরেকটি অভিযোগ দেন সদস্যরা। সেখানে তারা ইউনিয়নের বরাদ্দকৃত ১০টি নলকূপ, ২টি লেট্টিন অনিয়মের মাধ্যমে সদস্যদের না জানিয়ে মনগড়া বিতরণ করেন বলে অভিযোগ করেন। রাস্তার কাজে নিয়োজিত মহিলা কর্মী নিয়োগেও তিনি সদস্যদের না জানিয়ে সুবিধা নিয়ে নিয়োগ দিয়েছেন মর্মে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর আলাদা অভিযোগ করেন।
গত ২৭ জুলাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর আরেকটি লিখিত অভিযোগ করেন ভিজিডির চাল আত্মসাতকৃত হতদরিদ্র নারী মালেহা খাতুন। অভিযোগে তিনি ইউপি চেয়ারম্যান আমির হোসেন রেজা তাকে ১৫ মাসের ভিজিডির চাল কম দিয়েছেন বলে জানান।
অভিযোগকারীদের মধ্যে ইউপি সদস্য আব্দুল হাই ও ইউপি সদস্য খোরশেদ আলম বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন রেজা নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই প্রকল্প বণ্টনে বৈষম্য করছেন। ইউপি সদস্যদের পাশ কাটিয়ে বরাদ্দ বণ্টনের নামে লোপাট করছেন। আমরা তার বিরুদ্ধে সবাই মিলে অনাস্থা দিয়েছি। একাধিক অভিযোগ করেছি উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরে। এখন চেয়ারম্যান পলাতক থাকায় পরিষদের স্বাভাবিক কাজ ব্যাহত হচ্ছে। তাই অবিলম্বে তাকে অপসারণ করে পরিষদের কাজ নির্বিঘেœ চালানোর উদ্যোগ নিতে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানাই।
ইউপি চেয়ারম্যান আমির হোসেন রেজার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সুকান্ত সাহা বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান অসুস্থ আছেন বলে আমাকে আজ এসএমএস দিয়ে জানিয়েছেন। তাছাড়া তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ হয়েছে তার তদন্ত চলছে। এ বিষয়ে আমি আরো খোঁজ-খবর নিচ্ছি।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ